ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখন ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। ছুটির আবেদন, জিপিএফ লোন, ব্যাংক লোনের কাগজ, বদলি ফরোয়ার্ডিং, এমনকি বেতন-বোনাস ছাড় করতেও গুণতে হয় মোটা অংকের ঘুষ। অভিযোগের তীর সরাসরি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হাসানুল হোসেন ও তার বিশ্বস্ত অফিস সহকারী আকরাম হোসেনের দিকে। আকরামের বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যা মামলার অভিযোগও।
হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্য সহকারী, এমনকি সিকিউরিটি গার্ডরাও অতিষ্ঠ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানান,
- ছুটির আবেদনে স্বাক্ষর করতে ৫-৭ হাজার টাকা
- জিপিএফ লোনের কাগজে স্বাক্ষর করতে ৩-৫ হাজার টাকা
- বদলি ফরোয়ার্ডিংয়ে ২০-৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়
এক স্বাস্থ্য সহকারী বলেন, “আমি মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে যোগদানের পরও ৪ মাসের বেতন আটকে রেখেছেন। বলেছি আমার কী অপরাধ? তবু ছাড় করেননি।”
সিকিউরিটি গার্ড ইসরাফিল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “কোরবানির ঈদের বোনাস এখনো পাইনি। দুই মাসের বেতন আটকে আছে। স্যারকে বললে বকা দেন। লিখলে কিছু হবে না, আমাদের দূরে বদলি করে দেবেন। আমার দুই মেয়ে এক ছেলে, ধার করে সংসার চালাই।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় ভালুকা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত অবস্থায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে সহযোগিতা করেছিলেন ডা. হাসানুল। গুলিবিদ্ধ আহত ছাত্রদের চিকিৎসা না দিয়ে পুলিশকে খবর দিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ৫ আগস্টের পর রাতারাতি বদলি হয়ে ফুলবাড়ীয়ায় যোগ দেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. হাসানুল হোসেন বলেন, “আমি নিজে কোনো টাকা নিই না। সিকিউরিটি গার্ডকে অনিয়মের জন্য অবজারভেশনে রেখেছিলাম, এখন বেতন-বোনাস দিয়ে দেব।”
ময়মনসিংহের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. ফয়সাল আহমেদ বলেন, “লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ময়মনসিংহ বিভাগের পরিচালক ডা. প্রদীপ কুমার সাহা বলেন, “ভুক্তভোগীরা নাম-মোবাইল নম্বর দিলে বিষয়টি দেখছি।”


