ময়মনসিংহ বিভাগের নবাগত বিভাগীয় কমিশনার মিজ ফারাহ শাম্মী এনডিসি স্পষ্ট করেছেন, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন মোকাবেলায় তাঁকে এখানে দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, "আমি এই নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে চাই। তবে রুটিন ওয়ার্ক চলবে যথা নিয়মে, কোনো কাজে ফাঁকি দিতে চাই না।" এ ছাড়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করে তিনি বলেছেন, যেকোনো অভিযোগ খতিয়ে দেখে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে ময়মনসিংহে প্রিন্ট, অনলাইন এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বিভাগীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে নবাগত কমিশনার মিজ ফারাহ শাম্মী আরও বলেন, "আমি কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে চাই না, বরং কাজ করে দেখাতে চাই। তবে দীর্ঘদিনের সমস্যা একদিনে সামাধান করা সম্ভব নয়। যেকোনো সমস্যা বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীদারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কাজ করতে হবে।"
ময়মনসিংহ বিভাগে ১৩ নভেম্বর নতুন কমিশনার হিসেবে যোগদান দেন মিজ ফারাহ শাম্মী। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, তিনি আগে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনে তিনি জোর দিয়ে বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন, সাধারণ প্রশাসনিক কাজে কোনো অবহেলা সয়ে নেওয়া যাবে না। এটি বিভাগীয় স্তরে নির্বাচনী পরিবেশ গড়ে তোলার পাশাপাশি উন্নয়নমূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ এখনও ঘোষিত হয়নি, তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে এটি ২০২৬-এর প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলা—ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনা—এ নির্বাচনী কর্মসূচি সফল করতে কমিশনারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, "সকল স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্বাচনী প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ করা হবে।"
দুর্নীতি বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে মিজ ফারাহ শাম্মী বলেন, "কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" একইভাবে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের (মসিক) প্রশাসক হিসেবেও সেখানকার কর্মকর্তাদের দুর্নীতি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটি বিভাগীয় প্রশাসনে স্বচ্ছতা বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ময়মনসিংহ বিভাগে গত এক বছরে প্রশাসনিক দুর্নীতির অভিযোগ ১৫ শতাংশ বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে নতুন কমিশনারের জিরো টলারেন্স নীতি স্থানীয় প্রশাসনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এমন নীতি নির্বাচনী পরিবেশকে আরও নিরপেক্ষ করবে।
সভায় মসিকের প্রশাসক হিসেবে তাঁর দায়িত্ব নিয়ে কথা বলে মিজ ফারাহ শাম্মী নগর পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি চুরি ও ছিনতাই প্রতিরোধে নগরীর প্রতিটি এলাকায় প্রয়োজনীয় লাইট স্থাপনের মাধ্যমে আলোর ব্যবস্থা, ডাস্টবিন স্থাপন এবং সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, "আগে যা হয়েছে, তা আমার জানা নেই। তবে এখন থেকে নগরীর প্রতিটি বহুতল ভবন অনুমোদন নিয়ম মেনে করতে হবে। প্রতিটি বহুতল ভবনে পার্কিং ব্যবস্থা থাকতে হবে। ভবন একস্থানে করবে আর পার্কিং থাকবে অন্য স্থানে, তা হতে দেওয়া হবে না।"
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের এলাকায় গত বছর চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ২০ শতাংশ বেড়েছে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই উদ্যোগগুলো নগরীর নিরাপত্তা ও পরিবেশগত মানোন্নয়ন ঘটাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল প্রকল্পে শিশুদের খাবারের গুণগত মান নিয়ে আপত্তি জানিয়ে নবাগত কমিশনার বলেন, "গত কয়েকদিন ধরে জেলার কয়েকটি উপজেলায় মিড ডে মিল প্রকল্প শুরু হয়েছে। এতে শিশু খাবার হিসেবে কলা, পাউরুটি এবং দুধ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এসবের গুণগত মান, সংরক্ষণ ও পরিবহন নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। একটি নির্দিষ্ট সময় পরই এই খাবারগুলো নষ্ট বা বাসি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।"
তিনি যোগ করেন, "এজন্য শিশুদের এমন খাবার দিতে হবে, যা সহজে নষ্ট না হয় এবং সংরক্ষণ করা যায়। এক্ষেত্রে ডিম, বিস্কুটসহ অন্য খাবার দেওয়া যেতে পারে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।" মিড ডে মিল প্রকল্প বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষায় পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ, যা ইউনিসেফের সহায়তায় চলে। গত বছর ময়মনসিংহ বিভাগে এ প্রকল্পে ৫ লাখ শিশু অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু গুণগত মান নিয়ে অভিযোগ বাড়ছে।
মতবিনিময় সভায় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার তাহমিনা আক্তার, মসিকের সচিব সুমনা মজিদ, ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো: সাইফুল ইসলাম, সিনিয়র সাংবাদিক এইচএম মোতালেব, অমির রায়, শামসুল আলম খানসহ প্রায় অর্ধশত সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সভাটি ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার অফিসে অনুষ্ঠিত হয়।


