শনিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৯

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ময়মনসিংহে নিজের ক্যাম্পাসে যাচ্ছেন ভুটান প্রধানমন্ত্রী


ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ময়মনসিংহে যাচ্ছেন। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ আয়োজিত বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং নিজের শিক্ষা স্মৃতিবিজড়িত স্থান পরিদর্শন, শিক্ষার্থী ও সহপাঠীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তিনি।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ২৪ ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. টান্ডি দর্জিসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী এ সফরে থাকবেন।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ক্যাম্পাসকে সাজানো হয়েছে। তার আগমনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে এখন সাজ সাজ রব। উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থী ও সহপাঠীরাও। দিনরাত চলছে সংস্কার ও সাজসজ্জার কাজ। এ উপলক্ষে নিরাপত্তাসহ সব প্রস্তুতি গ্রহণ গ্রহণ করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ২৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে এসে বিদেশি কোটায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হন। ১৯৯৯ সালে এমবিবিএস পাস করে ঢাকায় সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়ে এফসিপিএস কোর্স সম্পন্ন করেন।
ডা. লোটে শেরিংয়ের সহপাঠী ডা. শফিকুল বারী তুহিন জানান, লোটে শেরিং ১৯৯১ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে এমবিবিএসে ভর্তির পর বাঘমারা মেডিকেল হোস্টেলে থাকতেন। তিনি খুবই মেধাবী ও ভদ্র। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি খুবই বন্ধুভৎসল ছিলেন। কথা বলতেন খুব কম। টেবিল টেনিস ও ক্যারাম খেলা পছন্দ করতেন। পহেলা বৈশাখে লোটে শেরিং ময়মনসিংহেই থাকতেন এবং তাকে নিয়ে মেলায় ঘুরতে যেতেন।
আরেক সহপাঠী ডা. এ এইচ এম রুহুল কুদ্দুস বলেন, আমরা শিহরিত এ জন্য যে আমাদের সহপাঠী শিক্ষার্থী ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। বন্ধু হিসেবে এমন একটি দিনে তাকে বরণ করব এটা খুবই আনন্দের।
তিনি বলেন, জীবনে বহুবার শুনেছি অক্সফোর্ড থেকে অমুক দেশের প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। এখন তো আমরাও গর্বের সঙ্গে বলতে পারব যে, ময়মনসিংহ মেডিকেলের একজন ছাত্র ভুটানের প্রধানমন্ত্রী আর তিনি আমাদের সহপাঠী ছিলেন। অথচ তাকে দেখে কখনো ভাবিনি, তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন। অবশ্য তাকে নিয়ে আমাদের অনেক স্মৃতি রয়েছে। পিকনিক করতে গিয়ে লাকড়ি কুড়িয়েছেন। সেই ছবি আমাদের সঙ্গে আছে। হয়তো সেই সব স্মৃতিরোমন্থন করতে আজ এখানে আসছেন।
প্রফেসর ডা. খাদেমুল ইসলামের অধীনে জেনারেল সার্জারি বিষয়ে ৬ মাস ইন্টার্নশিপ করেছেন লোটে শেরিং। এরপর ঢাকায় সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়ে এফসিপিএস কোর্স সমাপ্ত করেন। ডা. লোটে শেরিং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় গর্ববোধ করেছেন প্রফেসর ডা. খাদেমুল ইসলাম।
মেডিকেলের বর্তমান শিক্ষার্থী নুসরাত বিনতে নদীয়া বলেন, এ কলেজের একজন বড় ভাই যিনি বর্তমানে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। তিনি আমাদের কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি সেই কলেজকে ভুলে যাননি। তিনি আসছেন। তাকে আমরা স্বাগত জানাব।
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, উনি যে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে কত ভালোবাসেন তার আগমনই বড় প্রমাণ।
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, এটা আমাদের জন্য অবশ্যই গর্বের। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং আমাদের সবার গর্ব, বাংলাদেশের গর্ব।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এসে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে কলেজে আসবেন। এ উপলক্ষে অডিটরিয়ামে অতিথি, ছাত্র ও শিক্ষকদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখবেন। তার বক্তব্য আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করবে।
তিনি আরো জানান, ছাত্রজীবনে যাদের সঙ্গে লেখাপড়া করেছেন, তাদের সঙ্গে একান্তে বসবেন। শিক্ষাজীবনের প্রথম ক্লাস থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত যেসব স্থানে যেমন গ্যালারি, ছাত্রাবাস, ছাত্র ক্যানটিন, ডক্টরস ক্যানটিন ও শেষ কর্মজীবন ৬নং ওয়ার্ড পরিদর্শন করবেন। 
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিংয়ের সফর উপলক্ষে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান।
ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ আবিদ হোসেন জানান, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিংয়ের আগমন কেন্দ্র করে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

test ads2


শেয়ার করুন