ফুলবাড়ীয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বাণিজ্যিক শাখার দ্বিতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্র। গত বুধবার রাত প্রায় ১০ টায় ময়মনসিংহ থেকে মা লাইলী বেগমকে ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে আসে বাড়িতে। মা ও ছেলে রাতের খাবার খায় একসাথে। খাবার শেষে আফজাল আম্মা তুমি ঘুমিয়ে পর, আমি পড়া শেষ করে ঘুমাবো। মায়ের সাথে বুধবার রাতে এই কথাই শেষ কথা হয় একমাত্র পুত্র আফজালের। এরপর মা ঘুমিয়ে পরেন। ফজরের নামাজের সময় মা ঘুম থেকে উঠে দেখে ঘরের দরজা খোলা, একমাত্র সন্তান নেই বিছানায়। পড়ার টেবিলে বই গুলো এলোমেলো অবস্থায় পরে রয়েছে। এরপর থেকে খুঁজাখুজি শুরু করেন তিনি। নিখোঁজের দুই দিন পর শুক্রবার সকালে বাড়ি থেকে প্রায় হাফ কিলোমিটার দূরে মাছের ফিশারিতে আফজালের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ফুলবাড়ীয়া উপজেলার বরুকা গ্রামের মৃত কারী ছফর আলীর পুত্র আফজাল হোসেন তাজু। বুধবার রাতে নীজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। শুক্রবার সকালে একই গ্রামের দুই শিশু ফিসারিতে মাছ ধরতে গিয়ে লাশ দেখতে পায়। পরে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে দুপুরে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপতালে মর্গে প্রেরণ করেন। লাশের মাথায়, চোখে, মুখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে ও ডান হাতের আঙ্গুল কাটা রয়েছে। বিকেলে সহকারী পুলিশ সুপার ত্রিশাল সার্কেল মোঃ আল আমীন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। হত্যার ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে একই গ্রামের দুদু মিয়া (৫০), সোহেল হোসেন (২৬) ও দুলাল মিয়া (৩৫) কে আটক করে জিঙ্গাসাবাদ করছে পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধে গত প্রায় দুই মাস পূর্বে আফজাল হোসেন তাজুর ফিসারীতে বিষ প্রয়োগ করে প্রায় দুই লাখ টাকার মাছ নিধন করে। এঘটনা দুদু ও সোহেলকে আসামী করে ফুলবাড়ীয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। অভিযোগের পর থেকে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল।
শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মা সহ আত্মীয় স্বজনদের আহাজারীতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। বারবার মুর্ছা যচ্ছেন মা। একমাত্র পুত্র সন্তান খুন হওয়ায় আনেকটাই বাকরুদ্ধ হয়ে যান মা । লাইলী বেগম বলেন-আম্মা তুমি ঘুমিয়ে পর, আমি পড়া শেষ করে ঘুমাবো, শেষ কথা বলেছিল আমার সাথে। ঘুম থেকে উঠে ভোরে যখন দেখি ঘরের দরজা খোলা, বিছানায় নেই আফজাল, মোবাইল ফোন রিসিভ করছেনা, তখনি যেন আমার মনটা বলে ওরা আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। আমার সন্তানকে সোহেল, দুলাল কেন নির্মমভাবে হত্যা করলো? আমার ছেলেকে হত্যা না আটক রেখে যা চাইতো সবই দিয়ে দিতাম। আকাশের দিকে দুহাত তুলে বলেন, আল্লাহ আমার সন্তান হত্যাকারীদের দ্রæত গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করো, যাতে করে আর কোন মায়ের বুক এভাবে খালি না হয়। ফুলবাড়ীয়া থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ কবিরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে তিনটি বিষয় সামনে নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে, ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করে জিঙ্গাসাবাদ করা হচ্ছে। বিকেল ৫ টা পর্যন্ত হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
source : banglarsongbad
source : banglarsongbad
- Tags:
- ফুলবাড়ীয়া
আপনার মতামত লিখুন :