বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০১৯

ময়মনসিংহে রেলের টিকেট কালোবাজারি সিন্ডিকেট ধরাছোয়ার বাইরে


ময়মনসিংহে আন্তনগর ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি সিন্ডিকেট ধরাছোয়ার বাইরেই রয়েছে। ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ ও কতিপয় অসাধু বুকিং সহকারীদের সহায়তায় বহিরাগত ও চিহ্নিত সিন্ডিকেট প্রতিদিন আন্তনগর ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি করে আসছে। ট্রেনের টিকেট চড়াদামে কালোবাজারে বিক্রির আয়ের ভাগ যাচ্ছে নানা মহলে। ফলে টিকেট কালোবাজারীর সাথে জড়িত চক্র ও মদদদাতারা বার বার চিহ্নিত হলেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। এ কারনে যাত্রী সাধারণ নির্ধারিত সময়ে লাইনে দাড়িয়েও পাচ্ছে না ট্রেনের টিকেট।
দীর্ঘদিনের অভিযোগ ময়মনসিংহ ও গফরগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে হাত বাড়ালেই মিলছে আন্তনগর সব ট্রেনের টিকেট। অসাধু বুকিং সহকারীরা নামমাত্র টিকেট লাইনে অপেক্ষমান যাত্রীদের কাছে ছেড়ে বাকী সব টিকেট বহিরাগতদের হাতে তুলে দিচ্ছে। পরে ঐ টিকেট বিক্রি হচ্ছে চড়াদামে। অভিযোগ রয়েছে, ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন সুপার (এসএস) জহুরুল ইসলামের অফিস সহকারী শামসুদ্দোহা স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ ভিআইপিদের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতিদিন একাই ট্রেনের ২০ থেকে ৩০টি টিকেট তুলে নিয়ে কালোবাজারে বিক্রি করছে। কালোবাজারে টিকেট বিক্রির বিষয়টি অকপটে স্বীকার করে স্টেশন সুপার জহুরুল ইসলাম বলেন, চাহিদার তুলনায় আন্তনগর ট্রেনগুলোর আসন সংখ্যা কম থাকায় এমন হচ্ছে। কালোবাজারে টিকেট বিক্রির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে অভিযান ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি। তবে স্থানীয়রা এটি আই ওয়াশ’ বলে দাবী করছেন। তাদের মতে, যাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে পরবর্তীতে তাদের প্রত্যেককেই ন্যাক্কার জনকভাবে প্রাইজ পোষ্টিং পাচ্ছে। অনেকেই এটি ‘সর্ষের ভেতর ভুত’ থাকার মত কথা বলে দাবী করছেন।
জানা গেছে, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ ও তারাকান্দি, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করছে আন্তনগর ছয়টি ট্রেন। আন্তনগর মোহনগঞ্জ ট্রেনে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকার জন্য শোভন চেয়ার ও শোভনসহ আসন বরাদ্দ ৪২টি। জামালপুরের তারাকান্দি থেকে ছেড়ে আসা আন্তনগর যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেন ময়মনসিংহ থেকে বরাদ্দ আসন মাত্র ১০৭টি। এর মধ্যে কেবিন ১ম সিট ৯টি, ১ম চেয়ার ১৮টি, শোভন চেয়ার ২০টি, শোভন ৬০টি। জামালপুরের জন্য এই ট্রেনে আসন বরাদ্দ ১৭১টি। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা আন্তনগর ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ময়মনসিংহের যাত্রীদের জন্য এই ট্রেনে আসন বরাদ্দ ৭৭টি। জামালপুরের জন্য এই ট্রেনে আসন বরাদ্দ ২০১টি। নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা আন্তনগর হাওড় এক্সপ্রেস ট্রেন ময়মনসিংহের জন্য আন্তনগর এই ট্রেনে আসন বরাদ্দ মাত্র ৪৩টি। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা আন্তনগর তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেন ময়মনসিংহে এ্যাসি কেবিন ৯টি, এ্যাসি চেয়ার ৫৬টি, ১ম সিট ৯টি ও শোভন চেয়ার ৬০টিসহ আন্তনগর এই ট্রেনে ময়মনসিংহের যাত্রীদের জন্য বরাদ্দ আসন ১৩৪টি। অথচ জামালপুরের জন্য বরাদ্দ করা আসন ১৯২টি। জামালপুরের তারাকান্দি থেকে ছেড়ে আসা আন্তনগর অগ্নিবীনা এক্সপ্রেস ট্রেন ময়মনসিংহের যাত্রীদের জন্য আসন বরাদ্দ রয়েছে ৯৯টি। জামালপুরের জন্য এই ট্রেনে আসন বরাদ্দ ২১২টি। এই হিসেবে আন্তনগর উল্লেখিত ছয়টি ট্রেনে ময়মনসিংহের জন্য মোট আসন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪৫৫টি। অথচ জামালপুরের চারটি ট্রেনের জন্যই আসন বরাদ্দ ৭৭৬টি। আন্তনগর ট্রেনের আসন ব্যবস্থাপনা ও বরাদ্দের এ চিত্র বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহের জন্য অমর্যাদাকর ও ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতৃত্বের দৈন্যতা বলে মনে ময়মনসিংহের সুশীল সমাজ। স্থানীয় সূত্রগুলোর দাবি, এই বরাদ্দ চাহিদার সিকিভাগেরও কম। প্রতিদিন আন্তনগর ট্রেনের টিকেটের চাহিদার তুলনায় আসন সংখ্যা কম থাকার বিষয়টিকে পুঁজি করে কালোবাজারি সিন্ডিকেট ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে তাদের রামরাজত্ব কায়েম করতে সক্ষম হয়েছে।
সূত্রগুলো আরও জানায়, ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী হামিদুর রহমানের নেতৃত্বে নজরুল ইসলাম, শহীদুল ইসলাম, কামরুন নাহার, নিশাত সুলতানা, খাদিজা খানম, জাহাঙ্গীর আলম, হৃদয় চৌধুরী, গোলাম রব্বানী ও তাজিম উদ্দিন প্রতিদিন আলাদা তিন শিফটে টিকেট বিক্রির দায়িত্বে থাকেন নয়জন বুকিং সহকারী। এর মধ্যে বুকিং সহকারী জাহাঙ্গীর আলম, খাদিজা খানম ও নিশাত সুলতানার কালোবাজারি অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ। নির্ধারিত ১০ দিন আগে সকাল ৮ টায় আন্তনগর ট্রেনের টিকেট কাউন্টারের কম্পিউটার ওপেন করার ৩০ মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে সব টিকেট। অভিযোগ রয়েছে আইন শৃংখলা বাহিনীর সামনেই বুকিং সহকারীরা সব টিকেট তুলে নিয়ে কালোবাজারি সিন্ডিকেটের সদস্য ইজ্জত আলী, তালেব আলী, সাত্তার, নগরীর পুরহিত পাড়ার বাসিন্দা মুহিত ও গফরগাঁওয়ের রিয়াজ, জাকির হোসেন, মাজহারুল ইসলাম, মুর্শিদের হাতে তুলে দিচ্ছে। পরে এসব টিকেট বিক্রি হচ্ছে ময়মনসিংহ ও গফরগাঁওয়ে।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে শ্রমিকলীগের সভাপতি শওকত উজ্জামান শাহীন জানান, এ নিয়ে আমরা বিব্রত। অসদাচরণসহ দুর্নীতির কারনে বুকিং সহকারী আলতাফ হোসেন আকন্দকে প্রথমে কিশোরগঞ্জ ও পরে জামালপুরের সরিষাবাড়িতে, রাহাত খানকে শায়েস্তাগঞ্জে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে আলতাফকে ঢাকা বিমানবন্দর ও রাহাত খানকে জয়দেবপুরে প্রাইজ পোষ্টিং দেয়া হয়। অর্থ কেলেংকারির সাথে জড়িত থাকার দায়ে সুমন সাহা জামালপুরে বদলি হলেও পরে ঢাকার কমলাপুরে পোষ্টিং দেয়া হয়। ন্যাক্কার জনক এসব পোষ্টিংয়ে মোটা অঙ্কের লেনদেন হয়েছে বলে প্রচার রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

test ads2


শেয়ার করুন