গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবিপ্রবি) বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক ইলিয়াস উদ্দিন সানি পলাতক অবস্থায় রয়েছেন। দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গত ২২ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ নূর হোসেন চৌধুরী স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে ইলিয়াস উদ্দিনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। অফিস আদেশে বলা হয়, তিনি গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে টানা ৬০ দিনেরও বেশি সময় কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। যথাযথ প্রমাণ ছাড়া অসুস্থতার অজুহাতে ছুটির আবেদন করার অভিযোগে তাকে "পলায়নের" দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ৩(গ) ধারা অনুযায়ী তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তকালীন তিনি কেবল খোরপোষ ভাতা পাবেন। একই সঙ্গে তাকে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও রাখা হয়েছে।
ইলিয়াস উদ্দিনের পরিচয় কেবল একজন শিক্ষক হিসেবে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি জামালপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা মির্জা আজমের সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) ছিলেন। তিনি ছাত্রলীগের সাবেক পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক এবং বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, তিনি নিয়োগ পাওয়ার সময় নির্ধারিত মানদণ্ডের নিচে সিজিপিএ ছিলেন। তবুও তৎকালীন সময়ে রাজনৈতিক চাপে তাকে নিয়োগ দিতে বাধ্য করা হয়। এছাড়াও, তিনি তার স্ত্রী আফসানা আক্তারকে অযোগ্য হলেও অ্যাডহকের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার পদে চাকরি পাইয়ে দেন, যার কোনো অনুমোদন ছিল না ইউজিসির।
ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত না থাকার পাশাপাশি ঢাকাতেই অবস্থান করতেন এবং বছরে হাতে গোনা কয়েকটি দিবস বা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন। একাধিক শিক্ষার্থী জানান, তাদের পুরো সেমিস্টারে তিনি একবার বা দুবার ক্লাস নিয়েছেন মাত্র। তার কোর্সের ক্লাস নিতেন অন্য শিক্ষকরা।
অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের একটি “সিন্ডিকেট” গড়ে তুলে প্রভাব খাটাতেন। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে ভয়ভীতি ছড়িয়ে দেওয়া হতো বলে জানা যায়। এমনকি ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে হুমকি দেওয়া হতো। বিশেষ কোনো ঘটনা বা গণ্ডগোল হলে অভিযুক্ত ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস পেতেন না কেউ।
ইলিয়াস উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার মোমেনাবাদ গ্রামে। দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ছাত্রলীগে যুক্ত হন, পরে মির্জা আজমের ঘনিষ্ঠ হয়ে দ্রুত উত্থান ঘটে তার। গত ১০-১৫ বছরে তিনি গ্রামে দালানকোঠা, ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে দামি ফ্ল্যাট, গাড়ি ইত্যাদি অর্জন করেছেন। অথচ সরকারি চাকরি সূত্রে এ সম্পদের উৎস প্রশ্নবিদ্ধ।