ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলার কলতাপাড়া বাজার থেকে ১ কিলোমিটার উত্তরে বিষকা গ্রামে গজু মোড়লের অভিশপ্ত প্রাসাদটির অবস্থান। স্থানীয় লোকজন এটিকে গজু মোড়লের দালান বলে বলে থাকে। গজু মোড়লের পুরো নাম গজিন্দ্র মোড়ল, কালের বিবতর্নে গজিন্দ্র মোড়ল থেকে গজু মোড়ল। এই প্রসাদের দক্ষিন দিক দিয়ে তৎকালিন সময়ে ব্রহ্মপুত্রের শাখা মোড়াই নামে নদী ছিল। কথিত আছে, নদীটি গভীর ও খরস্রোতা তীরবর্তী এলাকায় প্রচুর গাব গাছ ছিল। নদী পথে সওদাগরগন নৌকা বা বজড়া দিয়া যাতায়াতের সময় নৌকাডুবির ভয়ের আশঙ্কায় উক্ত স্থানে পাঠা ভোগ দিতে হতো। ভোগ না দিলে নৌকা, জাহাজ মালামাল নিয়ে নদীতে তলিয়ে যেতো বলে জনশ্রুতি রয়েছে। বিশিষ্ট লেখক অধ্যাপক এম এ কাজী মোনায়েমের ‘গৌরীপুরের ইতিহাস- ঐতিহ্য কিংবদন্তী’ গ্রন্থে উল্লেখ্য একদিন এক সওদাগর সিলেট অঞ্চল থেকে ব্যাবসা-বাণিজ্য করে ফেরার পথে রাত হয়ে যায়। তখন উক্ত সওদাগর চুড়ালী গ্রামের প্রাড়ম নামক স্থানে নৌকা বা বজড়া নোঙর করে মাঝি মাল্লাদের নিয়ে রাত্রি যাপন করে। সে সময় এই নদী পথে চোর ডাকাতের দৌরাত্ম্য ছিল। ডাকাতের ভয়ে রাতে খাওয়া দাওয়ার পর সওদাগরের কাছে রক্ষিত স্বর্ণ-মুদ্রার কলসী রান্নার চুল্লীর ছাইয়ের নিচে লুকিয়ে রেখেছিল। পরদিন সকাল বেলা সওদাগর ভূল বসত স্বর্ন মুদ্রার কলসী ফেলে রেখে চলে যায়। গজু মোড়ল সকালবেলা গরু, ছাগল চড়াতে এসে নদীর পাড়ে চুল্লী দেখতে পায়। গজু মড়ল বিড়ি বা হুক্কা পানের জন্য আগুন খুজতে গিয়ে ছাইয়ের নিচে কলসীর সন্ধান পায় এবং তা বাড়ীতে লুকিয়ে রাখে। এদিকে সওদাগরের মনে পড়ে যা, ফেলে আসা কলসীর কথা। সওদাগর পূনরায় উক্ত স্থানে এসে কলসী খুজে না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। আশে পাশে লোকদের জিজ্ঞাসা করে জানতে পারে গজু মোড়ল সকালবেলা গরু চড়াতে এসে ছিল। পরে সওদাগর কলসীর সন্ধানে মড়লের বাড়ীতে হাজির হয়ে ফেলে আসা কলসীর কথা গজু মোড়লকে বলে। গজু মোড়ল স্বর্ন মুদ্রার কলসীর কথা অস্বীকার করেন। সওদাগর তাকে অনেক অনুরোধ করেও যখন ব্যর্থ, তখন স্বর্ন মুদ্রার ৫০% ভাগ দেবার প্রস্তাব করেন। কিন্তু গজু মোড়ল কিছুতেই এই স্বর্ন মুদ্রার কলসীর কথা স্বীকার করেনি। তখন সওদাগর যাবার সময় অভিশাপ দেয় তোমার বংশে বাতি থাকবে না। তুমি নির্বংশ হবে। পরবতির্তে গজু মোড়ল স্বর্ণ মুদ্রা বিক্রি করে অনেক সম্পদের মালীক হন। গজু মড়লের সখ জাগে একটি বিলাশ বহুল বাড়ী তৈরী করার। সে সময় পাকা বাড়ী নির্মান করতে হলে অনুমতিপত্রের প্রয়োজন। গজুমড়ল গৌরীপুরের জমিদারের নিকট অনুমতি নিয়ে ৫ শতাংশ জমির উপর প্যাঁছানো সিড়িসহ দ্বিতল কারুকার্যময়, দৃষ্টিনন্দন প্রাসাদসহ বাড়ীর সামনে বিশাল পুকুর খনন করে সান বাঁধানো ঘাট নির্মান করেন। বাড়ী থেকে পুকুরে আসা রাস্তাটি পাকা করেন। ভবনটির প্রতিবেশী প্রবীণ মোঃ আব্দুল বারেকসহ এলাকাবাসী জানান। বতর্মানে ভবনসহ জায়গাটি পাশর্বতি আদিনাথ দারোগার দখলে রয়েছে। ১৩০৪ সনে ভুমিকম্পে গজু মোড়লের দৃষ্টি নন্দন প্রাসাদটি ধেবে যায়। এলাকাবাসী জানায় অভিশাপের দালানের বসতি গজুমড়লের একরাতে কয়েকজন সন্তানের মৃত্যু হলে গজু মড়ল ভারসাম্যহীন ও সম্পদহীন হয়ে পর সে নিখোঁজ হয়ে পড়েন। জনশ্রুতি রয়েছে গজু মড়ল নিঃস হয়ে সে ভারতে চলে যায়। ১৯৭১ সালে ভবনে রক্ষিত মুল্যবান জিনিষপত্র লুটও ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। আগাছা ডেকে যাওয়া এই ভবনটি গজু মোড়লের অভিশপ্ত প্রাসাদ কালের সাক্ষী হিসাবে দাড়িয়ে আছে। অভিজ্ঞ মহল মনে করে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার প্রয়োজনে অভিশপ্ত প্রাসাদটি সংস্কার করা প্রয়োজন।
(সংগৃহীত)
test ads2
খবর বিভাগঃ
ময়মনসিংহ